আজ গানের কিংবদন্তি মহম্মদ রফি’র জন্মদিন

feature-image

Play all audios:

Loading...

হিন্দি সিনেমার একটা সময় গান মানেই ছিল মহম্মদ রফি’র গান। অবশ্য আজো ফুরিয়ে যাননি মহম্মদ রফি। এ সময়ের হাজারো গানের ভিড়ে এই কণ্ঠটি এখনো আলাদা করে চেনা যায়। উপমহাদেশ সেরা এই কিংবদন্তি প্লে-ব্যাক


গায়কের জন্মদিন আজ। ১৯২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর অমৃতসরে তার জন্ম। মাত্র ছাপ্পান্ন বছরের জীবনেই হিন্দি ছবির প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে এখনও সেরার শিরোপাটি তারই।  ‘ও দুনিয়াকে রাখোয়ালে’- বৈজু বাওরা ছবির


এই গানটি শোনেননি কে! হিন্দি গানের শ্রোতাদের কাছে মহম্মদ রফি আজো সেরা। কোনো একটা গান নয়, তার সব গানই শ্রেষ্ঠ। ৩৫ বছরের সঙ্গীত জীবনে ২৬ হাজারের মতো গান গেয়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম


লিখিয়েছেন। শ্রোতারা সেই সব গান আজো শোনেন। রফি জনপ্রিয় হয়ে ওঠা শুরু সঙ্গীত পরিচালক নওশাদ আলীর সঙ্গে কাজ শুরুর পর থেকে। নওশাদের সুর আর রফির কণ্ঠ এই দুইয়ে মিলে যে সৃষ্টি, তা তুলনাহীন। মৃত্যুর


আগ পর্যন্ত অটুট ছিল এই সঙ্গীত জুটি। অবশ্য সময়ের চাহিদার কারণে তার দীর্ঘ ৩৫ বছরের কেরিয়ারে শচীন দেব বর্মন, সলিল চৌধুরী, শঙ্কর-জয়কিষেণ, লক্ষ্মীকান্ত-পেয়ারেলাল, ও পি নাইয়ার মতো প্রায় সব বড় বড়


সঙ্গীত পরিচালকদের সঙ্গেই কাজ করেছেন রফি। লতা, আশা ভোঁসলের সঙ্গে মহম্মদ রফির অনেক গান এখনো অমর হয়ে আছে। মহম্মদ রফিকে সঙ্গীত পরিচালক নওশাদ বলতেন ভারতের আধুনিক তানসেন। মান্না দে বলেছিলেন, ‘রফির


মতো গায়ক ভারতবর্ষ আর পায়নি।’ কী গাননি মোহাম্মদ রফি? হিন্দি গানের কোনো শ্রোতাই তার গানের ভুবন ঘুরে এসে বলতে পারবেন না, কই আমার জন্য কিছুই তো গাননি? হ্যায় না বোলো বোলো, চাক্কে মে চাক্কা, রে


মামা রে মামা রে, ছু ছু কারতি বা নানহে মুনহে বাচ্চে এমন গান বাচ্চা প্রবীণ সবাইকেই স্পর্শ করে। দেশের গান: অ্যায় ওয়াতান কে ওয়াতান, হাম লায়ে হ্যায় তুফান, আব তুমহারে হাওয়ালে, ইয়ে দেশ হ্যায় বীর,


আপনি আযাদী কো হাম বা হিন্দুস্তান কি কসম-এর মতো অসংখ্য গান। বিয়ের গান: চালো রে ডোলি উঠাও, মেরা ইয়ার বানা হ্যায়, আজ মেরে ইয়ারকে শাদি হ্যায়, তেরি রবনে বানাদি বা বাবুল কি দুয়ায়ে লেতি, যা শুনে


মুগ্ধ হবেন যে কেউ। আছে বন্ধুর জন্য, বন্ধুত্বের জন্য গান দুনিয়া ছোটে ইয়ার, বাড়ি দুরসে আয়ে হ্যায়, বড়ে মিয়া দিওয়ানে, মেরি দোস্তি মেরা পেয়ার, এক রাস্তা দো রাহি ইত্যদি। কাওয়ালি: না তো কারাভান কি


তালাশ, হাম কিসিসে কম নেহি, পর্দা হ্যায় পর্দা, ম্যায় ইধার যায়ু ইয়া, ইয়ে হ্যায় ইশ্ক ইশ্ক, রাজ কি বাতৃ ইত্যাদি। রফির এমন গানও আছে যা শুনে ধার্মিকেরা উপাসনার কাজ কিছুটা সেরে নিতে পারেন।


সৃষ্টিকর্তার কাছে আত্মনিবেদনের গানগুলোর মাঝে সবার আগে বলতে হবে ও দুনিয়াকে রাখোয়ালে, ইয়া নবি সালামালাইকা, বৃন্দাবনকা কৃষ্ণা, মন তরপাত হরিদর্শন, বড়ি দের ভাই নন্দলালা এবং মেরি বিনতি সুনো


ভাগোয়ান-এর কথা। ক্লাসিক্যাল: মনরে তু কাহে, সাওন আয়ে না আয়ে, নাচে মন মোরা মগন বা মধুবনমে রাধিকা নাচেরে। হিন্দি লোকগীতি আরো অসাধারণ হয়ে ওঠে রফির কণ্ঠে ন্যায়েন লড় যাইহে, পিপড় কে পাতওয়া, গোভিন্দ


আলারে আলা, দুখ ভারে দিন বিতে, সে রকম কিছু গানেরই উদাহরণ। তার রোমান্টিক গানও সেরা।  -ইয়ে মেরা প্রেমপত্র, রাহা গার্দিশোমে হারদম, খিলোনা জানকার, আপ আয়ে বাহার আয়ি, কেয়াসে কেয়া হো গ্যায়া, দিলকে


ঝড়োকেমে তুঝকো বিঠাকার, ইয়াদ না যায়ে বিতে দিনোকি, বাহারো ফুল বরসায়ো, ছু লেনে দো নাজুক, না ঝটকো জুলফসে পানি, খিলোনা জানকার তুম, দিন ঢল যায়ে হায়, টুটে হুয়ে খাবোনে, কাভি খুদপে, হাম তুম সে জুদা


হোকে, তেরি পেয়ারি পেয়ারি সুরতকো, আনেসে উসকে আয়ে বাহার, চান্দ মেরা দিল, পুকারতা চলা হু ম্যায়, চওদভিঁকা চান্দ, মেরে মেহবুব তুঝে, ইয়ে রেশমি জুলফে। তার প্লেব্যাক গায়ক হওয়ার সুযোগ এসে যায় মাত্র


১৭ বছর বয়সে।  মুম্বাইতে তার প্রথম ছবি ‘গাও কী গোরি’ (১৯৪২)।  রফির সেরা সময়ে নায়করাও শর্ত জুড়ে দিতেন, তাদের ছবিতে রফিকে রাখতেই হবে।  সমসাময়িক এমন নায়ক খুঁজে বের করা কঠিন যার রফির গানে ঠোঁট


মেলানোর সৌভাগ্য হয়নি। গায়ক-নায়ক-পরিচালক কিশোর কুমারকে পর্যন্ত রফির গান গাওয়ার অভিনয় করতে হয়েছে। ষাটের দশকে শাম্মি কাপুরের জন্যে রফি ছাড়া অন্য কাউকে গাইতে দেখা ছিল অবাক হওয়ার মতো ঘটনা। দিলীপ


কুমার, রাজেন্দ্র কুমার, রাজ কাপুর, দেব আনন্দ, ধর্মেন্দ্র বা শশি কাপুরদেরও খুব কমই দেখা যেতো অন্য শিল্পীদের গানে ঠোঁট মেলাতে। গান্ধিজীর প্রয়াণের পরপরই তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রফির


গাওয়া একটা গান বাজারে এলে ‘সুনো সুনো অ্যায় দুনিয়াওয়ালো, বাপুকি অমর কাহানি’(১৯৪৮) সে গান শুনে জওহর লাল নেহেরু কেঁদে ফেলেছিলেন। পাঞ্জাবি, মারাঠি, সিন্ধি, গুজরাটি, তেলেগু, বলতে গেলে ভারতের সব


ভাষাতেই গান গেয়েছেন মোহাম্মদ রফি। গেয়েছেন ইংরেজীতেও।  ১৯৮০ সালের ৩১ জুলাই তিনি প্রয়াত হন। মোহাম্মদ রফির শেষ গানটি ছিল ‘আস পাস’ ছবির ‘শ্যাম ফির কিউ উদাস হ্যায় দোস্ত’। এ গানটি রেকর্ড করার


কয়েক ঘণ্টা পরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন রফি।