
- Select a language for the TTS:
- Bangla Bangladesh
- Bangla Bangladesh Male
- Bangla India Female
- Bangla India Male
- Language selected: (auto detect) - BN
Play all audios:
খুলনার কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোবরা-ঘাটাখালী গ্রামের বাসিন্দা নুবাইদ সরদার তর্জনি তুলে বললেন, ‘ওই যে বিল দেখছেন; শুধুই চিংড়ি ঘের! ফসলি জমি সব লবণের গ্রাসে চলে গেছে। সরকারের আইনে কী আছে
জানি না। তবে যারা চিংড়ি চাষ করে, তারা আইনের তোয়াক্কা করে না।’ নুবাইদ যে বেড়িবাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন, সেটাকে বাঁধ না বলে জমির ‘আইল’ বলাই ভালো। অনতিদূরেই গ্রামের বাঁধের ধ্বসে যাওয়া
অংশ। সেখানেই ছিল আবুল বাশার শেখের বাড়ি। বাড়ির ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল আম্পানের প্রবল স্রোত। আবুল বাশার বললেন, ‘আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। ঘের মালিকদের কোনো সমস্যা নাই। শহরে তাদের বাড়ি আছে; গ্রামে
না-এলেও চলে। ভোগান্তি সব গরিব মানুষের।’ জানা গেল, চিংড়ির এই আগ্রাসন শুরু হয় আশির দশকে। সরকারি আনুকূল্যে, আইন-নীতির তোয়াক্কা না করে বিত্তবান প্রভাবশালীরা যেখান-সেখান দিয়ে সাগরের নোনাপানি
ঢুকিয়ে, ব্যাঙের ছাতার মতো চিংড়ি ঘেড় করেছেন। তবে উপকূলীয় অঞ্চলে বিপর্যয়ের শুরু সেই ষাটের দশকে। উপকূলীয় বেড়িবাঁধের পাশাপাশি ভারতের ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ এর অন্যতম কারণ। উপকূলীয় বেড়িবাঁধ
নির্মাণ শুরু হয় ১৯৬১ সালে। একই বছর ফারাক্কা বাঁধেরও নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সাগরের জোয়ারের সঙ্গে যে পলি ঢুকতো, বাঁধ নির্মাণের আগে পলিমাটি ভাটার টানে নদী দিয়েই আবার নেমে যেত। কিন্তু ফারাক্কার
কারণে খুলনা অঞ্চলের নদ-নদীগুলো পানির অভাবে স্বাভাবিক গতি হারায়। ফলে পলি জমে নদীর তলদেশ ভরাট হতে থাকে। এক পর্যায়ে জমির চেয়ে নদী উঁচু হয়ে যায়। জমির পানি নদীতে নামতে না পেরে ভবদহ, বিল ডাকাতিয়ার
মতো জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এভাবেই বিপর্যয়ের সূত্রপাত ঘটে প্রাকৃতিক নিয়মে। তবে উপকূলজীবনের সর্বনাশের কারণগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ যে নিয়ন্ত্রণহীন চিংড়ি চাষ, এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই।
এলাকাবাসী, বিশেষজ্ঞ, এমনকি সরকারের দু’জন মন্ত্রী এবং একজন সচিব বাঁধের ক্ষতির পেছনে সরাসরি বেপরোয়া চিংড়ি চাষিদের দায়ী করে মন্তব্য করেছেন। এমনকি, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ২০১০ সালে সাতক্ষীরার
শ্যামনগরে গিয়ে চিংড়ি চাষীদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, ‘ঘের করে পয়সা কামাবেন আর পাউবোর বাঁধ কেটে বিপর্যয় ডেকে আনবেন, এটা হতে দেওয়া হবে না।’ ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে চলাচলের পথ।
আশাশুনির কুড়িকাহুনিয়া গ্রামের ছবি বেড়িবাঁধে কর্তৃত্ব চিংড়ি চাষির উপকূলঘেঁষা চার উপজেলা- সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি এবং খুলনার কয়রা ও পাইকগাছায় সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, কোথাও বেড়িবাঁধ
কেটে পানি ঢোকানো হয়েছে চিংড়ি ঘেরে, কোথাও বাঁধ ফুটো করে পাইপ লাগানো হয়েছে, আবার কোথাও বাঁধের দু’ধারে মোটা পাইপ; সঙ্গে নলকূপ লাগানো। বাঁধের একপাশে নদী, অন্যপাশে চিংড়ির ঘের- পশ্চিম উপকূলের
বিপন্ন এলাকায় এটা খুবই পরিচিত দৃশ্য। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চিংড়ি ঘেরে নোনাপানি ঢোকানো হয় নদী থেকে। এ জন্য পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে আবেদন করতে হয়। তদন্তের পর নির্বাহী প্রকৌশলী পাকা
ড্রেন তৈরির অনুমতি দেন। সাতক্ষীরার আশাশুনি উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় পাউবোর বাঁধ কেটে তিন শতাধিক স্থানে পাইপ বসিয়ে বিভিন্ন নদী থেকে পানি তোলা হচ্ছে চিংড়ি ঘেরের
জন্য। অথচ এ কাজে মাত্র ৪০টির অনুমোদন রয়েছে। আশির দশকের শুরুতে আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোর ঋণের টাকায় চিংড়ি চাষ শুরু হয়। সে সময় বিদেশি গবেষকেরা উপকূল অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে কৃষকদের বুঝিয়েছেন- চিংড়ি
চাষে লাভ বেশি। এভাবে ব্যক্তি উদ্যোগে চিংড়ি চাষ শুরু হলেও এক সময় বড় পরিসরে চলে যায়। সরকারের তৃতীয় ও চতুর্থ মৎস্য প্রকল্পের আওতায় চিংড়ি চাষকে উৎসাহিত করা হয়। চিংড়ি ঘেরের লবণ পানি আনা হয় নদী
থেকে। আবার শুকনো মৌসুমে চিংড়ি ঘের পানিমুক্ত করা হয়। সে পানিও নদীতেই ফেলা হয়। এই গোটা ব্যবস্থাপনার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অলিখিতভাবে বেড়িবাঁধের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় চিংড়ি ঘের মালিকদের হাতে। চিংড়ি
চাষ কি বাঁধ নাজুক করছে না? প্রশ্ন তুললে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, ‘বাঁধের দু’পাশে পানি থাকায় বাঁধ নাজুক হয়ে পড়ছে। চিংড়ির ঘেরগুলো করা হয়েছে বেড়িবাঁধের গা ঘেঁষে। আমরা
বিষয়টি দেখেছি। আমরা একটি চিঠি তৈরি করেছি; ডিসিদের দেব। চিঠিতে আমরা বলেছি, বাঁধ থেকে কমপক্ষে ৩০০ মিটার দূরে ঘের করতে হবে। বাঁধের ভেতরে, বাঁধের কাছে জলাশয় রাখা যাবে না। এ আদেশ অমান্য করলে আমরা
কঠোর ব্যবস্থা নেব।’ উপমন্ত্রীর কথার সূত্র ধরে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা উপমন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশনা পেয়েছি। তার আলোকে কাজও শুরু
করেছি। কেউ যদি বাঁধের ১০০ মিটারের মধ্যে কোনো কার্যক্রম করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’ ঘূর্ণিঝড় 'আম্পান' জীবনে এনেছে স্থবিরতা। কয়রার গোবরা গ্রামের ছবি এর আগেও
তো আইন অনুযায়ী মামলা হয়েছে, কিন্তু অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে গেছে। এমন বেশকিছু মামলার কথা আমরা জানি। স্মরণ করিয়ে দিলে মোস্তফা কামাল বলেন, ‘অতীতে কী ঘটেছে সে প্রসঙ্গে কথা বলতে চাই না। সামনে যেগুলো
হবে, সেগুলো নিয়ে বলতে চাই। ইউএনওদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে মানুষকে সচেতন করার ওপর জোর দেওয়া হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি একইসঙ্গে প্রটেকশন দেওয়া-
দু’ভাবেই আমরা কাজ করবো।’ মাঠে কোনো অ্যাকশনে গিয়েছেন এখন পর্যন্ত? প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘না, ঈদের পর আমরা কার্যক্রম শুরু করবো।’ আইন শুধুই কেতাবে এই প্রতিবেদন তৈরির প্রয়োজনে সরকারের
সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আইন, নীতিমালা, বিধিমালা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রতিটি স্থানে বেড়িবাঁধ সুরক্ষার বিষয়টি খুবই স্পষ্ট করে উল্লেখ রয়েছে। জাতীয় চিংড়ি নীতিমালা ২০১৪-এর ৫.৭৫ ধারায় উল্লেখ
রয়েছে: ‘যত্রতত্র পোল্ডারের বেড়িবাঁধ কেটে লোনা পানি প্রবেশ না করিয়ে নির্ধারিত স্থান দিয়ে পরিকল্পিত উপায়ে লোনা পানি প্রবেশ করিয়ে চিংড়ি চাষ করতে হবে। বাঁধের ক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মূল
নকশা অনুসরণ করতে হবে।’ জাতীয় পানি নীতি ১৯৯৯-এর ৪.১ (ঘ) ধারায় উল্লেখ রয়েছে: ‘বনায়ন ও নদীর ভাঙন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নদী অববাহিকার বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ এবং ভূমি ক্ষয় রোধের জন্য ক্যাচমেন্ট এলাকার
ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।’ সমন্বিত ক্ষুদ্র সেচ নীতিমালা ২০১৪-এর ৫.৬ (ঘ) ধারায় উল্লেখ রয়েছে: ‘উপকূলীয় এলাকায় বিদ্যমান শতাধিক পোল্ডারের ব্যবস্থাপনা কাঠামোকে ব্যবহার করে সেচ ব্যবস্থায় মিঠা
পানি সংরক্ষণ ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।’ প্রকৃতপক্ষে ‘কাজীর গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই’-এর মতো অবস্থা উপকূলীয় অঞ্চলে। এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা জলবায়ু পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী
বলেন, ‘চিংড়ি চাষ নিয়মতান্ত্রিকভাবে হচ্ছে না। চিংড়ি চাষিরা প্রভাবশালী। তারা চিংড়ির ঘেরে লবণ পানি ওঠানো এবং নামানোর জন্যে বাঁধ কেটে ফেলে। বাঁধের গা ঘেঁষে চিংড়ির ঘের থাকায় লবণ পানি চুইয়ে বাঁধের
ক্ষতি করে। আমরা বহু বছর ধরে দেখে আসছি, এ ব্যাপারে আইন থাকলেও তা প্রয়োগ হচ্ছে না।’ আম্পানবিধ্বস্ত এলাকা ঘুরে চোখে পড়ে অসংখ্য স্লুইসগেট। তা থেকে পোল্ডারের ভেতরের পানি নিষ্কাশন হওয়ার কথা।
কিন্তু তা না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে স্থানীয়রা জানান, স্লুইসগেটগুলো জবরদখল করে লবণ পানি ঢুকানো হয়। স্লুইসগেট খোলা ও বন্ধ করা হয় প্রভাবশালী চিংড়ি চাষিদের ইচ্ছায়। অব্যবস্থাপনার কারণে
স্লুইসগেটের বাইরে চর পড়ে উঁচু হয়ে গেছে। ভেতরের মাঠের চেয়ে বাইরের অংশ অনেক উঁচু। ফলে জলোচ্ছ্বাসের পানি ঢুকলে তা আর বের হতে পারে না। ঘূর্ণিঝড় আম্পানে যেসব স্থান দিয়ে পানি ঢুকেছে, তা এক মাসের
বেশি সময় পরেও যে বের হয়নি, তা এই অনুসন্ধানে দেখা গেছে। বাঁধ সুরক্ষার আইন কি প্রয়োগ হয়? প্রশ্ন করা হলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, ‘এটা মেজর সমস্যা। চিংড়ি ঘেরের মালিকেরা
কোনো কিছু মানতে চান না। আমরা জেলা পানি কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছি, তারা যাতে চিংড়ি চাষিদের সঙ্গে বসে অভ্যন্তরীণ খাল যেগুলো আছে, সেখান থেকেই পানি নেয়। তারা বাঁধে হাত দিতে পারবে না।’ কিন্তু
মন্ত্রী-সচিবদের এসব হুঁশিয়ারির অনেক আগে থেকেই বেড়িবাঁধের ক্ষতি করলে সরাসরি শাস্তির বিধানের কথা উল্লেখ রয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন-২০১২তে। এমনকি এর মাধ্যমে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তিনি
ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য উপযুক্ত আদালতে মামলা করতে পারবেন। চিংড়ি চাষের কারণে এভাবে নাজুক হয়ে যায় বেড়িবাঁধ বেড়িবাঁধ সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে বাংলাদেশ পানি আইন ২০১৩, উপকূলীয় অঞ্চল পলিসি ২০০৫সহ
বিভিন্ন বিধি বিধানে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব বিধি বিধানের যথাযথ প্রয়োগ যে নেই, তার প্রমাণ মেলে অনুসন্ধান চালানো চার উপজেলার চারটি থানা ও সংশ্লিষ্ট আদালতগুলোর রেকর্ড ঘেঁটে। সাতক্ষীরার
আশাশুনি থানার রেকর্ড বলছে, বেড়িবাঁধ কাটাছেঁড়ার অপরাধে এই থানায় ৩৬০টি মামলা আছে। কিন্তু মামলাগুলো ফ্রিজ হয়ে আছে। কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় কারো সাজাও হয়নি। শ্যামনগর থানার
রেকর্ড অনুযায়ী, বাঁধ সুরক্ষা আইনে বাঁধ কাটা, পাইপ বসানো, বাঁধ ছিদ্র করা, আউট ড্রেন না রাখাসহ অন্যান্য কারণে এ উপজেলায় আইলার পর থেকে এ পর্যন্ত ৮০০ মামলা হয়েছে। এর মধ্যে হাইকোর্ট থেকে
স্থগিতাদেশ আছে প্রায় পাঁচশ মামলায়। বাকি মামলার আসামীদের কেউ কেউ ৫-৭ দিন কারাগারে আটক ছিলেন। পরে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। তবে ঘের মালিকেরা কেউ আটক হননি। যারা আটক হয়েছেন, তারা ঘেরের শ্রমিক।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বেড়িবাঁধের ক্ষতি দেখে তালিকা করে পাউবো স্থানীয় থানায় অভিযোগ আকারে জমা দেয়। পরে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। এ রকম একটি মামলায় বিষয়ে গাবুরার নাপিতখালী গ্রামের মহসিন
আলম বলেন, ‘২০১১ সালে কিছু এলাকায় বেড়িবাঁধ ফুটো করে নদী থেকে লবণ পানি ওঠানো হতো। পাউবো গোটা ইউনিয়ন ঘুরে চিংড়ি চাষিদের তালিকা করে মামলা দেয়। পরে সবাই মিলে ঢাকায় গিয়ে হাইকোর্টে আপিল করি। আমাদের
উকিল ছিলেন ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। আপিলের ১৫-২০ দিনের মধ্যে আমরা নির্দোষ প্রমাণিত হই এবং মামলা থেকে মুক্তি পাই।’ বেড়িবাঁধের ক্ষতি করা অন্যায়, ক্ষতি করলে
মামলা হতে পারে- আপনি জানতেন? জবাবে মহসিন আলম মোড়ল বলেন, ‘জানতাম। কিন্তু আমাদের তো কিছু করার নেই। চিংড়ি চাষ করতে হলে নদী থেকে লবণ পানি উঠাতেই হবে। বাঁধের ক্ষতি না করেই পানি উঠিয়েছি। আমরা
জানি, বাঁধের ক্ষতি মানেই আমাদের ক্ষতি। তবু আমাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।’ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন, ঘের করার সময় বেড়িবাঁধের ওপর চিংড়ি চাষিদের
অত্যাচারে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চিংড়ি চাষের ফলে পরিবেশগত বিপর্যয়ও আছে। এর প্রভাব পড়ছে জনজীবনে। নতুন সংকট তৈরি হচ্ছে। ইচ্ছে করলে এ থেকে বের হয়ে আসা যায়। কিন্তু কেউ সে চেষ্টা করছে না। অনেকভাবে
আমরা মানুষকে বুঝিয়েছি। যার জমি সে যদি না চায়, তাহলে অন্যে তো জোর করে এটা করতে পারবে না।’ চিংড়ির ঘেরে লবণ পানি ঢোকাতে বেড়িবাঁধ কেটে পাইপ বসানো হচ্ছে চিংড়ি চাষির মুখেও বাঁধের দাবি যাদের
বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ, সেই চিংড়ি চাষিরা কী বলেন? পাইকগাছা উপজেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর অভিযোগ পুরোপুরি নাকচ করে দিয়ে বললেন, ‘সবাই চিংড়ি চাষিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের
আঙুল তুলছেন। কিন্তু এ বিষয়টি কেউ ভাবছেন না- বাঁধ ধ্বসে জলোচ্ছ্বাসের পানি ঢুকলে সবার আগে ক্ষতি হয় চিংড়ি ঘেরের।’ শ্যামনগরের নাপিতখালী গ্রামের চিংড়ি চাষি মিজানুর রহমান মোড়ল বললেন, ‘এক
সময় বাঁধ ফুটো করে চিংড়ির ঘেরে লবণ পানি তোলা হতো। কিন্তু এখন আর সে অবস্থা নেই। আমরা এখন বাঁধের উপর দিয়ে পাইপ লাগিয়ে নদী থেকে লবণ পানি নেই। এতে বাঁধের ক্ষতি হয় না। তাছাড়া বাঁধ শক্ত থাকলে
আমাদেরও ভয় থাকে না।’ মিজানুর রহমানের দাবি বরং আমরা চেষ্টা করি বেড়িবাঁধ যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তিনি দুর্যোগে ক্ষতির হিসাব তুলে ধরে বলেন, ঘূর্ণিঝড় আইলার আগে আমরা পারিবারিকভাবে
চিংড়ির ঘের করতাম। আইলায় আমরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছি। আম্পানে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩ লাখ টাকা। বেড়িবাঁধ ধ্বসে চিংড়ি ঘেরে পানি ঢুকে সব মাছ ভেসে গেছে। যে চিংড়ি চাষিদের বিরুদ্ধে বেড়িবাঁধ ক্ষতি
করার অভিযোগ, সেই চিংড়ি চাষিরাই আবার শক্ত, টেকসই বেড়িবাঁধ চান। শুধু মিজান মোড়ল নন, যতজন চিংড়ি চাষির সঙ্গে আলাপ হয়েছে, সবারই একই দাবি। প্রত্যেকেই বলেছেন, বেড়িবাঁধ নাজুক থাকলে তো চিংড়ি ঘেরই
বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাহলে আমরা কেন বাঁধের ক্ষতি করবো? শক্ত ও টেকসই বেড়িবাঁধ কেমন হওয়া উচিত? এই প্রশ্নের জবাবে মিজানুর রহমান মোড়ল বলেন, ‘বর্তমানে বেড়িবাঁধ করা হয় ১২ ফুট উঁচু। বাঁধ তৈরির পর
টেকে মাত্র ৭-৮ ফুট। আমরা বলেছি, বাঁধ করতে হবে ২০ ফুট উঁচু। তাহলে অন্তত ১৫ ফুট টিকবে। একই সঙ্গে নদীর তীরে ৬০ ফুট ঢাল এবং ভেতরের অংশে ৪০ ফুট ঢাল রাখতে হবে। তাহলেই বেড়িবাঁধ টেকসই হবে। আর যেসব
স্থানে জোয়ারের বেশি চাপ পড়ে, সেসব স্থানে কংক্রিটের ব্লক ফেলতে হবে।’ ** বাঁধের ফাঁদে উপকূলজীবন আগামীকাল পড়ুন: বাঁধভাঙা আশ্বাসে শুধুই দীর্ঘশ্বাস